একদিন যিনি ছিলেন উদীয়মান তারকা—আজ তার নাম উচ্চারিত হয় ভয়, বিতর্ক আর অপরাধের সাথে। মাঈনুল আহসান নোবেল, যিনি গান দিয়ে কোটি ভক্তের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন, আজ তার বিরুদ্ধে একের পর এক ভয়ংকর অভিযোগ।
মাইক্রোফোন হাতে নিলেই গ্যালারি কেঁপে উঠত—”নোবেল, নোবেল” ধ্বনিতে। তার কণ্ঠে হতবাক হতো উপস্থিত শ্রোতারা। প্রতিভা, আত্মবিশ্বাস আর ক্যারিশমা দিয়ে তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলার সংগীতাঙ্গনের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ছোট-বড় নানা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে দর্শকদের মন জয় করেছিলেন একের পর এক।
নোবেলের উত্থান পতন
কিন্তু সময়ের সাথে সাথে সেই জ্বলজ্বলে তারকা যেন ধীরে ধীরে নিভে যেতে শুরু করলেন। মাদক, সহিংসতা, কটূক্তি, নারী নির্যাতন—একের পর এক বিতর্কে জড়িয়ে পড়লেন তিনি।নোবেলের জীবনে অন্ধকারের শুরু খুব দ্রুতই হয়। মাদকাসক্তির অভিযোগে যখন তাকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়, তখনও তার অনেক ভক্ত বলেছিলেন, “সম্ভবত এটাই তার জন্য চোখ খোলার সময়।”কিন্তু সেটা যে শুধুই শুরু ছিল, তা বোঝা যায় পরে। সংগীতশিল্পী হিসেবে দায়িত্বহীনতা, কনসার্টে দেরিতে উপস্থিত হওয়া, চুক্তিভঙ্গ, মঞ্চে অশালীন আচরণ—এগুলো যেন রুটিনে পরিণত হয়।
কখনো ভারতীয় লিজেন্ডদের বিরুদ্ধে কটূক্তি করে, কখনো সাংবাদিকদের সাথে বেয়াদবি করে—নোবেল যেন নিজের ক্যারিয়ারকে নিজেই ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছিলেন।
এই বিতর্ক গুলো নোবেলকে আটকে দেয় তার যাত্রায়। তখনই তিনি সামাজিক মাধ্যমে ফিরে আসেন কিছু মধুর ও অনুতাপময় বার্তা নিয়ে তিনি বলেন আমি বদলে যাব।ভক্তদের ভালোবাসা আমাকে আবার গড়বে ।
ভক্তরাও আশা করেছিল, একদিন ঠিকই ঘুরে দাঁড়াবেন নোবেল। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিবার সুযোগ পেয়েও তিনি ফিরে আসেননি। বরং আবারও ডুবে গেছেন অন্ধকারে, আবারও চিরচেনা অপরাধের ছায়ায়।
অতীতের অপরাধের ছায়া মুছতে না মুছতেই, আবারও ভাইরাল হলো একটি ভয়াবহ ভিডিও।ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, এক তরুণীকে সিঁড়ি বেয়ে টেনে হিচড়ে নামাচ্ছেন নোবেল। পুলিশ জানায়, ঐ তরুণী ইডেন কলেজের ছাত্রী। তাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বাসায় ডেকে আনেন নোবেল এবং পরবর্তীতে সাত মাস আটকে রেখে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করেন। শুধু তাই নয়, সেই নির্যাতনের দৃশ্য নিজের মোবাইলে ধারণ করে নানা উপায়ে ব্ল্যাকমেইল করতেন তিনি।
নোবেল ঘিরে ভক্তদের আক্ষেপ ও ভালোবাসা আবারো গ্রেফতার নোবেল
এক সময় যাঁর গানে উদ্বেলিত হতো দর্শকশ্রোতা, আজ সেই নোবেলকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছেন অনেকেই।কেউ কেউ বলছেন—অবিশ্বাস্য,যে কন্ঠ এক সময় আশা জাগাতো, তা এত অমানবিক হতে পারে!
অনেকেই আবার লিখেছেন, তারকা হওয়ার আগে ভালো মানুষ হওয়া জরুরি। নোবেল সেই তা হতে পারেননি, বরং ভুল উদাহরণ হয়ে উঠেছেন।
একদিনের তারকা আজ অপরাধীর খাঁচায় বন্দী। যিনি একসময় ছিলেন সাফল্যের প্রতীক, আজ তিনিই হয়ে উঠেছেন আত্মবিধ্বংসী এক উদাহরণ। বিশেষজ্ঞরা বলেন—নিয়ন্ত্রিত জীবন না হলে প্রতিভা এক সময় ধ্বংস ডেকে আনে। আর নোবেল তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
সততার অভাব, আত্মনিয়ন্ত্রণের অভাব, আর নৈতিক অবক্ষয় একজন প্রতিভাবান মানুষকে কতটা নিচে নামিয়ে দিতে পারে, তা নোবেলের ঘটনাই প্রমাণ করে। এই গল্প শুধু একজন মানুষের পতন নয়, বরং সমাজের জন্য এক জোরালো সতর্কবার্তা।